Header Ads

Header ADS

বিশুদ্ধ সংখ্যার ধারণা ।

বিশুদ্ধ সংখ্যা বলতে বস্তু নিরপেক্ষ সংখ্যার ধারণাকে বুঝায়। প্রস্তর যুগ পেরিয়ে আরও অনেক পরে এ ধারণার বিকাশ ঘটেছে। এক বা দুইয়ের গণ্ডী পেরিয়ে আরও বড় সংখ্যা নির্দেশ করতে প্রথম কেবল যোগ ব্যবহার করা হতো। পরে ধীরে ধীরে যোগ এবং গুণনের সাহায্যে ছোট থেকে বড় সংখ্যার দিকে যাওয়া শুরু হয়। দুটি অস্ট্রেলীয় গোত্রের উদাহরণ এখানে উল্লেখযোগ্যঃ

  •  মারে রিভার গোত্র : এনিয়া (এক), পেচেভাল (দুই), পেচেভাল-এনিয়া (তিন), পেচেভাল- পেচেভাল (চার)। 
  • কামিলা রোই গোত্র : মাল (এক), বুলান (দুই), গুলিবা (তিন), বুলান-বুলান (চার), বুলান-গুলিবা (পাঁচ), গুলিবা-গুলিবা (ছয়)। 

সংখ্যার ধারণা স্পষ্ট হতে শুরু করে বাণিজ্যের প্রসারের সাথে সাথে। কারণ এ সময় হিসাব সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার প্রয়োজন পড়ে এবং এক গোত্রের সাথে আরেক গোত্রের তথ্যের আদান প্রদান জরুরী হয়ে উঠে। একটি সুম্পষ্ট সংখ্যা ধারণার উদাহরণ হিসেবে বাংলা সংখ্যা পদ্ধতির কথা বলা যেতে পারে। দশমিক পদ্ধতি ব্যবহার করে এখানে সংখ্যা গণনা করা হয়ে থাকে। এক থেকে দশ পর্যন্ত হলো মূূল সংখ্যা। সংখ্যাকে বিভিন্ন ব্যবস্থায় প্রকাশ করা সম্ভবঃ 

দশমিক ব্যবস্থা 

এই ব্যবস্থায় সংখ্যার একেকটি অঙ্ক দশের এককটি গুণিতক। অনেক একককে দশের বিভিন্ন গুণিতকে প্রকাশ করার জন্য বিশেষ উপসর্গ আছে। যেমন-


বাইনারি ব্যবস্থা 

বাইনারি সংখ্যা ব্যবস্থায় শুধু দুইটি অংক ০ ও ১ ব্যবহার করা হয়। যেমন- দশমিক ৬ সংখ্যাটি বাইনারিতে প্রকাশিত হবে ১১০ হিসাবে। প্রতিটি অবস্থানের গুরুত্ব (Weight) ২ করে, অর্থাৎ 
এই সংখ্যা পদ্ধতির সুবিধা হলো ইলেক্ট্রনিক বর্তনীতে খুব সহজেই বাইনারি সংখ্যায় হিসাব করা যায়। ফলে কম্পিউটার ও ডিজিটাল বর্তনীতে এই সংখ্যা ব্যবস্থার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে।

বৃহত্তম মৌলিক সংখ্যা আবিষ্কার 

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক কার্টিস কুপার এক কোটি ৭৪ লাখ ২৫ হাজার ১৭০ অংকের সংখ্যাটি আবিষ্কার করেন। এর আগে ২০০৮ সালে আবিষ্কৃত মৌলিক সংখ্যাটিতে এক কোটি ২৯ লাখ ৭৮ হাজার ১৮৯ টি অংক রয়েছে। জানা যায় মৌলিক সংখ্যা অনুসন্ধানে গ্রেট ইন্টানেট মার্সেন প্রাইম সার্চ (জিআইএমপিএস) নামের শক্তিশালী কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাহায্যে নিয়েছেন কুপার। তিনি এ নিয়ে মোট তিনটি মৌলিক সংখ্যা আবিষ্কার করলেন। নতুন এ সংখ্যাটি হলো ৪৮তম বিরল শ্রেণির মৌলিক সংখ্যা। এছাড়াও কম্পিউটার দিয়ে সংখ্যাটির মৌলিকত্ব যাচাই করা হয়েছে। এই আবিষ্কারের ফলে তিন হাজার মার্কিন ডলারের ডিআইএমপিএস পুরস্কার পান কুপার। তিন লক্ষ ৬০ হাজার প্রসেসরের সমন্বয়ে গঠিত জিআইএমপিএস প্রতি ১৫০ লক্ষ কোটি (ট্রিলিয়ন) হিসাব করতে পারে। জিআইএমপিএসের নির্মাতা ও মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী জর্জ ওল্টম্যান বলেন, নতুন কিছু আবিষ্কার করা সব সময়ই উপভোগ্য। এটি অনেকটা মাউন্ট এভারেস্ট আরোহনের মতো। 

অমায়িক সংখ্যা (Amicable Number) 

“২২০ ও ২৮৪।” 

“সংখ্যারা আবার কিভাবে বন্ধ হয়! ২২০ ও ২৮৪ এর ব্যাপারটিই বা কী?” 

২২০ এর প্রকৃত উৎপাদকগুলি (Proper Factor) হলো- ১, ২, ৪, ৫, ১০, ১১, ২০, ২২, ৪৪, ৫৫, এবং ১১০। এবং ২৮৪ এর প্রকৃত উপাদক হলো ১, ২, ৪, এবং ১৪২। এবার ১+২+৪+৫+১০+১১+২০+২২+৪৪+৫৫+১১০= ২৮৪ এবং ১+২+৪+৭১+১৪২= ২২০। আত্মায় আত্মায় মিল না হলে কি এরূপ মিল সম্ভব? এ তো মানিক জোড়ের নমুনা! আর তাই ২২০ ও ২৮৪ হচ্ছে অমায়িক জোড় সংখ্যা (Amicable Pair)।

অমায়িক সংখ্যার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। বিশেষ করে যাদুবিদ্যা ও জ্যোতিষ শাস্ত্রে, ভালবাসার আরক (Love Potion) ও তাবিজ-কবজ (Talisman)তৈরিতে অমায়িক সংখ্যা ব্যবহার করা হতো। বাইবেলের কিছু কিছু ভাষ্যকারের মতে, জেনেসিসের (Genesis) ২৩:১৪ বাক্যটিতে অমায়িক সংখ্যার ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যেখানে বর্ণনা করা হয়েছে হয়রত ইয়াকুব (আঃ) কর্তৃক তাঁর ভাই হয়রত ঈসা (আঃ)-কে ২২০ টি ছাগল উপহার দেয়ার কথা। নব্য-প্লেতোনিয় দার্শনিক আয়ামব্লিকাস (আনু. ২৫০-৩৩০ খ্রি.)- এর মতে, পীথাগোরাস অমায়িক সংখ্যার ব্যাপারে অবগত ছিলেন। পীথাগোরিয়ানরা এদের উপর নানা অতিন্দ্রীয় রহস্যময় গুণ আরোপ করতো বলে জানা যায়। তারা অবশ্য ২২০ ও ২৮৪ জোড়টিকেই কেবল চিনত। 

অমায়িক সংখ্যা বের করার সাধারণ সূত্রটি সর্বপ্রথম উদ্ভাবন করেন থাবিত ইবনে ক্কুররা (৮২৬-৯০১ খ্রি.); আনুমানিক ৮৫০ সালে। থাবিত বনু মুসার ভ্রাতৃত্রয়ের একজন, মুহাম্মদ ইবনে মুসা ইবনে শাকিবের আমন্ত্রণে বৃত্তীয় নগরী বাগদাদে গমন করেছিলেন, বাইতুল হিকমা তথা জ্ঞানের নিবাসে (House of Wisdom) জ্ঞান-বিজ্ঞান সাধনায় ব্রত নিয়ে। অমায়িক সংখ্যার উপর গবেষণাকারী অন্যান্য আরবীয় গণিতবিদদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আল-মাজরিতি (মৃত্যু ১০০৭ খ্রি.) আল-বাগদাদী (৯৮০-১০৩৭ খিস্টাব্দ), এবং আল-ফারিসী (১২৬০-১৩২০ খ্রি.)। 

ষোড়শ শতকে পারস্যের গণিতবিদ মুহাম্মদ বাকির ইয়াজদি (৯৩৬৩৫৮৪,৯৪৩৭০৫৬) অমায়িক জোড়টি আবিষ্কার করেন, যদিও কেউ কেউ একে রেনে ডেকার্তের (১৫৯৬-১৬৫০ খ্রি) উপর আরোপ করে থাকেন। ইতিহাসে গণিতের এই শাখাতে প্রাচ্যের অনেক অবদানের কথা ভুলে যাবার একটা প্রবণতা দেখা যায়। 

থাবিতের সাধারণ সূত্রটি পিয়েরে দ্য ফামা (১৬০১-১৬৫৬ খ্রি.) এবং ডেকার্তে পুনরাবিষ্কার করেন। লিউনার্দো অয়লার (১৭০৭-১৭৮৩ খ্রি.) পরে সেটিকে বিস্তুত করেন। ১৯৭২ সালে বরহো এটিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যান। ফামা এবং ডেকার্তে এমন সব অমায়িক জোড় খুঁজে পান, যা আরব গণিতবিদদের কাছে বহু পূর্বেই সুপরিচিত ছিল।

No comments

Powered by Blogger.