“এডুটেইনমেন্ট” শিক্ষা ও বিনোদনের প্রভাব।
শিক্ষা ও বিনোদন একসাথে একটি নুতন দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যা এডুটেইনমেন্ট নামে পরিচিত। এডুকেশন এবং এন্টারটেইনমেন্ট শব্দ দুটি থেকে এডুটেইনমেন্ট-এর উৎপত্তি। এডুটেইনমেন্ট হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে শিক্ষার্থীদের বিনোদনের মাধ্যমে সার্থকভাবে কোনো বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়।
এডুটেইনমেন্টের মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের সমস্যা হতে সহজে শিখানো এবং প্রফিশিয়েন্সি এবং আকর্ষণীয় হওয়ার সাথে সাথে নিরাপদ একটি বিনোদন দেওয়া। এটি একটি প্রভাবশালী টুল যা পরিবেশগত এবং ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে।
"এডুটেইনমেন্ট” কন্টেন্ট প্রধানত শিক্ষা ও বিনোদনমূলক মিশ্র কন্টেন্ট এর একটি নতুন পদ্ধতি। যা সকল জাতির মানুষের জন্য আকর্ষণীয় এবং প্রভাবশালী একটি মাধ্যম হিসেবে স্থান করে নিচ্ছে। বর্তমান সময়ে আমরা অনলাইন বিনোদন এবং শিক্ষা সম্পর্কিত কন্টেন্ট প্রায়শই ব্যবহার করছি। এডুটেইনমেন্ট আমাদের শিক্ষার সাথে বিনোদনের সংমিশ্রনের একটি নতুন অভিজ্ঞতা দিচ্ছে। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে বিনোদনের মাধ্যমে যাতে তারা জীবনের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারে। এডুটেইনমেন্ট সম্পূর্ণরূপে একটি শিক্ষামূলক এবং আকর্ষণীয় বিনোদন।
এডুটেইনমেন্ট কন্টেন্টের প্রভাব সম্পর্কে বলা যায়, এটি একটি নতুন শিক্ষামূলক পদ্ধতির সাথে মানুষকে দুর্লভ জ্ঞান সংগ্রহ করার সুযোগ দেয়। এটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জন করার একটি আনন্দদায়ক পদ্ধতি যেখানে শিক্ষামূলক ভিডিও, গেম, মুভি ও গল্প বলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সামনে বিষয় উপস্থাপন করে শিক্ষা দেয়া হয়।
এডুটেইনমেন্ট কন্টেন্ট এর সুবিধাগুলো হতে পারে এমন-
শিক্ষণীয় বিষয়টির উপভোগ্যতা বৃদ্ধি করেঃ এডুটেইনমেন্ট বিষয়বস্তুকে মনোরম ও উপভোগ্য করে যা শিক্ষার্থীদের বিষয়বস্তুর প্রতি মনোযোগী করে তোলে।
সংরক্ষণশীলতা বৃদ্ধিঃ একেবারে কথার মাধ্যমে বা কোনো উদাহরণের মাধ্যমে শিখানোর চেয়ে এডটেইনমেন্টে বিষয়বস্তুকে অনেকটা স্পর্শযোগ্য করে উপস্থাপন করা যায়। এতে করে শিক্ষার্থীরা পাঠের বিষয়বস্তু সহজে মনে রাখতে পারে।
দক্ষতা উন্নয়নঃ এডুটেইনমেন্ট বিষয়বস্তু ক্রিটিক্যাল থিংকিং, সমস্যার সমাধান এবং সৃজনশীলতা ইত্যাদি সম্পর্কে দক্ষতা উন্নয়ন করতে পারে।
উদ্দীপনা উন্নয়নঃ এডুটেইনমেন্ট কন্টেন্ট ইতিবাচকভাবে জ্ঞান অর্জনের প্রতি শিক্ষার্থীদের আরো বেশি উদ্দীপনা তৈরি করতে পারে।
জিজ্ঞাসামূলকতা উন্নয়নঃ এই ধরণের কন্টেন্ট শিক্ষার্থীদের মধ্যে জিজ্ঞাসামূলকতা (curiosity) অর্থাৎ জানার আগ্রহ উন্নয়ন করতে পারে। এতে তাদের নতুন নতুন তথ্য অন্বেষণ এবং উদ্ভাবন করতে উৎসাহিত করে।
আগ্রহ উন্নয়নঃ এডুটেইনমেন্ট কন্টেন্ট শিক্ষার্থীদের সেই সকল বিষয়ের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারে যে সকল বিষয় তাদের কাছে বোরিং বা আগ্রহবোধ করে না।
সংযুক্ততা বৃদ্ধিঃ এডুটেইনমেন্ট কন্টেন্ট শিক্ষার্থীদের মিথস্ত্রিয়া এবং অংশগ্রহণমূলক শিখনের ফলে কোনো বিষয়ের সাথে সংযুক্ততা (engagement) বৃদ্ধি করতে পারে।
নিজ কেন্দ্রীক শিক্ষাঃ এডুটেইনমেন্ট কন্টেট ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষার অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এতে প্রত্যেকে তার শিক্ষার ব্যক্তিক শৈলী এবং উপযোগিতা তার প্রয়োজন অনুযায়ী ঠিক করে নিতে পারে।
সহযোগিতায় উৎসাহ প্রদান করেঃ এডুটেইনমেন্ট কন্টেট সহযোগিতা এবং দলগত কাজকে উৎসাহিত করতে পারে। যা বর্তমান কর্মশক্তিতে একটি অপরিহার্য দক্ষতা হিসেবে পরিগনিত হয়।
আজীবন শিক্ষাকে উৎসাহিত করেঃ এডুটেইনমেন্ট কন্টেন্ট আজীবন শিক্ষার ভালবাসাকে উৎসাহিত করে। ফলে শিক্ষার্থী শ্রেণি কক্ষের বাইরেও তার শেখা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত হয়।
তবে এডুটেইনমেন্ট অনেক সুবিধা থাকলেও এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে কম্পিউটার ও স্মার্ট গ্যাজেট ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। কখনো কখনো শিক্ষার চেয়ে বিনোদনকে প্রাধ্যন্য দিতে পারে, ফলে সুপারফিশিয়াল শিক্ষা এবং ধারণার মধ্যে অসম্পূর্ণতা থাকতে পারে। শিক্ষার বিষয়বস্তুর উপর সম্পূর্ণ জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানের গভীরতা নাও থাকতে পারে। শিক্ষার একটি নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর সকল দিক কভার নাও করতে পারে। শিক্ষা না বিনোদন কোনটি বেশি গ্রহন করবে এটি শিক্ষার্থীকে বিভ্রান্ত করতে পারে। শিক্ষার সাথে সম্পর্কহীন কিছু বিষয়বস্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা উপযুক্ত নাও হতে পারে। তাই শিক্ষার লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিষয়বস্তু তৈরি এবং ব্যবহারের উপর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।
No comments